পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন (বেথুন) কী ভূমিকা নিয়েছিলেন? অথবা,উনিশশতকেনারীশিক্ষা বিস্তারে ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন(বেথুন) সাহেব কী ভূমিকা নিয়েছিলেন?

সূচনা : উনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা তথা নারীশিক্ষা বিস্তারে যেসকল বিদেশি শিক্ষানুরাগী ভারতবর্ষে এসেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব ছিলেন

 ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন (বেথুন) সাহেব। ব্রিটিশ শাসনকালে বেথুন সাহেব 1848 খ্রিস্টাব্দে লর্ড ডালহৌসির আইন মন্ত্রী হিসেবে ভারতবর্ষে এসেছিলেন। ভারতবর্ষে এসে তিনি ভারতবর্ষের দুর্বিষহ গ্রামীণ রীতিনীতি এবং শিক্ষাব্যস্থা দেখে নিরাশ হয়েছিলেন। আর এর পরেই তিনি ভারতবর্ষে নারীশিক্ষা বিস্তারে বিশেষ করে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে প্রয়াসী হয়েছিলেন।

নিজ ভাষায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রয়াস : বেথুন সাহেব আঞ্চলিক ভাষা বিশেষ করে প্রতিটি প্রাদেশিক ভাষায় শিক্ষাদানের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। তাঁর মতে, এর ফলে সামাজিক কুসংস্কারের যেমন অবসান হবে তেমনি পিছিয়ে পড়া নারীশিক্ষারও প্রসার হবে।

বেথুন স্কুল প্রতিষ্ঠা : নারীশিক্ষা প্রসারে উদ্যোগী ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য বেথুন সাহেব 1849 খ্রিস্টাব্দের 7 মে একটি বালিকা বিদ্যালয় (হিন্দু ফিমেল স্কুল) প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, মদনমোহন তর্কালঙ্কার, রামগোপাল ঘোষ প্রমুখ খুবই উদ্যোগী ছিলেন। বিদ্যাসাগর ছিলেন এই স্কুলের প্রথম সম্পাদক।

 বেথুন কলেজ স্থাপন : বিশেষ সামাজিক বেড়াজালে আবদ্ধ তৎকালীন নারীসমাজের মধ্যে উচ্চশিক্ষার বিস্তারের জন্য বেথুন সাহেব কলকাতায় একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে বেথুন কলেজ নামে পরিচিত। কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় এবং চন্দ্রমুখী বসু ছিলেন এই কলেজ থেকে পাশ করা প্রথম মহিলা স্নাতক ।

আধুনিক শিক্ষার প্রসার : বাংলার নারীদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটানোর জন্য বেথুন সাহেব ফিমেল জুভেইনাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠায়, বঙ্গানুবাদ সমাজ গঠনে এবং কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

মূল্যায়ন : ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন কলকাতার বেথুন স্কুলের প্রতিষ্ঠালগ্নে বলেছিলেন—“আমি বিশ্বাস করি আজকের দিনটিতে একটি বিপ্লবের সূচনা করতে যাচ্ছি…… আমরা সফল হয়েছি এবং আজকে যে আদর্শের বীজ রোপিত হলো তা আর কোনো দিন বিফল হবে না।” ভারতবর্ষে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষার মেলবন্ধন ঘটিয়ে শিক্ষার বিস্তারে বেথুন যে অবদান রেখে গেছেন তা চিরস্মরণীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *