সাঁওতাল বিদ্রোহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। অথবা, সাঁওতালরা বিদ্রোহ করেছিল কেন?

সূচনা : অষ্টাদশ শতক থেকেই কোম্পানির প্রতিনিধিগণ, জমিদার ও মহাজন শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারের প্রতিবাদে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে একাধিক উপজাতি বিদ্রোহ হয়েছিল, যার মধ্যে অন্যতম ছিল সাঁওতাল বিদ্রোহ। সাঁওতাল উপজাতির মানুষেরা বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, ধলভূম, ভাগলপুর অঞ্চলে বসবাস করত। তারা দীর্ঘদিন ধরেই সাম্রাজ্যবাদী শাসন ও শোষণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল।

সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রেক্ষাপট/কারণ 

মহাজনি প্রকোপ

জমিদারদের খাজনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার ভয়ে সাঁওতালরা চড়া হারে মহাজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে বাধ্য হতো। এই ঋণের দায়ে তাদের জমির ফসল, গোরু-বাছুর, ঘরবাড়ি এমনকী মা-বোনদের ইজ্জত পর্যন্ত হারাতে হতো।

রেলপথ নির্মাণ

রেলপথ নির্মাণের কাজে সাঁওতাল শ্রমিকদের নিয়ে গিয়ে খুবই কম পারিশ্রমিকে বা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করিয়ে নেওয়া হতো।

খ্রিস্টধর্মের প্রচার

খ্রিস্টান মিশনারিরা সাঁওতালদের ধর্মকে নীচু করে দেখিয়ে তাদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করত, যা ছিল সাঁওতাল বিদ্রোহের অপর একটি কারণ।

অতিরিক্ত রাজস্ব আরোপ

এই উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষেরা বনজঙ্গলের জমিকে চাষযোগ্য করে তুললেও তার ওপর কোম্পানি ও সরকার নিযুক্ত জমিদাররা রাজস্ব চাপাত যা ছিল এই বিদ্রোহের অপর একটি কারণ।

সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলাফল/গুরুত্ব

সাঁওতাল বিদ্রোহের ভয়াবহতায় কোম্পানি বাধ্য হয়ে সাঁওতালদের বিশেষ অধিকারের স্বীকৃতি দেয়, পৃথক সাঁওতাল পরগনা গঠন করে, মহাজনদের শোষণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

মন্তব্য: ওপরের আলোচনায় স্পষ্ট সাঁওতাল বিদ্রোহ বাংলার কৃষক আন্দোলনে এক গুরুত্বপূর্ণ বিস্ফোরণ। এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও পরে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পটভূমি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *