সূচনা : রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের প্রধান শিষ্য ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি হিন্দু ধর্মকে বিশ্বদরবারে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে সর্বদা প্রয়াসী ছিলেন।
ধর্মীয় ক্ষেত্রে তাঁর নবআদর্শ নব্যবেদান্তবাদ নামে পরিচিত। তাঁর মতে, মানবজাতির কেবল একটাই ধর্ম হবে এমনটা কখনোই কাম্য নয়, বরং বিশ্বের প্রতিটি মানুষের ধর্ম
এমন হওয়া উচিত যার দ্বারা প্রত্যেকে নির্জীব প্রতিকূলতাকে জয় করতে পারে।
ধর্মচিন্তার প্রেরণা: স্বামী বিবেকানন্দের মতে, ধর্মীয় ভাবনার মূল বিষয়বস্তু হওয়া উচিত বেদ এবং বেদের আদর্শ। বিবেকানন্দ তাঁর গুরুর নির্দেশে বেদান্তকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করে যুক্তিগ্রাহ্য ও গ্রহণযোগ্য করে তোলেন।
ধর্মের মূল্য : স্বামীজির মতে, ধর্ম হওয়া উচিত এমন যার দ্বারা মানবজাতির কল্যাণ করতে পারা যায় এবং যেখানে মানুষ যেকোনো অবস্থাতেই মানসিক সাহায্য পেতে পারে। অর্থাৎ মানুষকে মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার জন্য ধর্মের আশ্রয় নিতে হবে এবং তা-ই হবে ধর্মের মূল বিষয়বস্তু।
নব্যবেদান্তবাদ : প্রাচীন অদ্বৈতবাদ বা অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনে বলা হয় ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা অর্থাৎ ব্রত্ন ছাড়া জগতের কোনো অস্তিত্ব নেই। বিবেকানন্দের ধর্মচিন্তার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নব্যবেদান্তবাদ। তাঁর মতানুসারে জীবজগতের সর্বত্রই ব্রহ্মের উপস্থিতি, তাই সাধারণ মানুষের সেবা করলেই ব্রহ্মের সেবা করা হবে। আর এই কারণেই স্বামী বিবেকানন্দ ‘শিবজ্ঞানে জীবসেবার কথা বলেছেন। তাঁর মতে, আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের প্রয়োজন নেই বরং সাধারণ মানুষের সেবাই সকলের ধর্ম হওয়া উচিত।
নব্যবেদান্তের পথ ও লক্ষ্য : বিবেকানন্দের মতে, বিশ্বের শ্রেণিবিভক্ত সমাজে প্রতিটি শ্রেণির বা বর্ণের মানুষের উপযুক্ত সাধনপথ আছে। তাঁর মতে, দেবত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবার লক্ষ্য-পদ্ধতিকে যোগ বলা হয়। আর এই যোগ বা যুক্ত হবার পদ্ধতি হলো কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ, রাজযোগ, ও ভক্তিযোগ। প্রত্যেকের উচিত নিজেদের নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ করে চলা। তবে আধুনিক কালে কর্মযোগের উপরেই অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।
মূল্যায়ন : স্বামী বিবেকানন্দ আসলে তাঁর নতুন আদর্শের দ্বারা সমগ্র বিশ্বদরবারে সনাতন হিন্দু ধর্মকে আরও জনপ্রিয় করে তোলেন। আসলে তাঁর মনীষার দ্বারা তিনি হিন্দু ধর্মের গৌরবান্বিত দিকগুলিকে সকল শ্রেণি, সকল ধর্মের মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তোলেন।