আর্য সভ্যতা: আর্য সভ্যতা প্রশ্ন উত্তর | The Aryan Civilization

 ভূমিকা (Introduction) : ভারতীয় সংস্কৃতি প্রान পর আর্যরা। সাধারণভাবে ‘আর্য’ বলতে একটি জাতির নাম মনে করা হয়। কিন্তু গবেষকদের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে যে, আর্য কোন জাতির নাম নয়, একটি ভাষা-গোষ্ঠীর নাম। ইন্দো-ইউরোপীয় এই ভাষা-গোষ্ঠীর অন্তর্গত হল গ্রীক, জার্মান, ল্যাটিন, সংস্কৃত, পারসিক, গথিক এবং কেলটিক।

এই সকল ভাষার যে-কোন একটিতে যিনি কথা বলেন, তিনিই ‘আর্য’। আর্য-সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভারতে প্রাগৈতিহাসিক যুগের অবসান ঘটেছে বলে ধরে নেওয়া হয়। আর্যদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ ‘বেদ’ ভারতে ঐতিহাসিক যুগের সূচনা করেছে। হরপ্পা-সংস্কৃতির তুলনায় অনুন্নত ও নিম্নমানের হলেও, আর্য-সংস্কৃতি তার ধারাবাহিকতা ও স্থায়িত্ব দ্বারা ভারতীয় সভ্যতা-সংস্কৃতিকে নবজীবন দান করেছে। আর্যদের অবদানেই কৃষিকেন্দ্রিক ভারতবর্ষ খুঁজে পেয়েছে এগিয়ে চলার পথ।

ভারতের সভ্যতা-সংস্কৃতিতে যে আর্যদের অবদান অসীম, তাদের আদি বাসস্থান কোথায় ছিল, এ প্রশ্নে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। কিছু ঐতিহাসিকদের ধারণা আমরা ভারতীয়, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠের মত তারা বহিরাগত। এবং দ্বিতীয় পক্ষের বক্তব্য বেশি যুক্তিগ্রাহ্য। আবার আর্যরা একটি দলে একবার ভারতে প্রবেশ করেছিল, নাকি দুল দুটিবার এসেছিল, এ প্রশ্নেও মতভেদ আছে।

হোয়েল মনে করেন, দু’দল আর্য দু-বার ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে। জীয়ারসন, রিজেলে প্রমুখ এই মতকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু র‍্যাপসন উপরিলিখিত মতের বিরোধী। তাঁর মতে, আর্যদের অভিপ্রয়াণ ঘটেছে একবারই এবং তা উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে। পরবর্তীকালে তারা গঙ্গা-যমুনার মধ্যবর্তী অঞ্চলে বসতি বিস্তার করে। সম্ভবত এই দু-বার বসতি বিস্তারের প্রচেষ্টাকেই হোয়ের্নল দু-বার অভিপ্রায় না বলে ধারণা করেছেন।

আর্যরা যখন ভারতে প্রবেশ করে তখন ছিল অর্ধ যাযাবর এবং গো-পালক শ্রেণী। তাদের ধর্মীয় ও আর্থিক জীবনের মূল ভিত্তি ছিল গো-সম্পদ। ক্রমে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে এবং চাষ-আবাদে মন দেয়। কৃষিকাজের সূত্রে সমাজে সৃষ্টি হয় নতুন নতুন পেশাদার শ্রেণীর, যেমন–সুত্রধর, তত্ত্বজীবী, ধাতুশিল্পী ইত্যাদি। চাষবাস থেকে আসে ব্যবসাবাণিজ্য।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আর্যদের অর্থনৈতিক জীবনে যেমন পরিবর্তন আসে, তেমনি সামাজিক জীবনেও ক্রমপত্তির লক্ষ্য করা যায়। প্রথমে ছিল কর্মভিত্তিক শ্রেণীভেদ। তবে শ্রেণী স্বাতন্ত্র্য ছিল খুবই ক্ষীণ। বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে অবাধ মেলামেশা চলত। ক্রমে ‘দাস’ শ্রেণী থেকে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করার উদ্দেশ্যে আর্যরা সমাজে ‘বর্ণভেদ’ ব্যবস্থা চালু করে এবং কঠোরভাবে তা অনুসরণ করতে থাকে।

যাইহোক, আর্য সভ্যতা বিস্তারের ফলে ভারতবর্ষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে এক নতুন জোয়ার আসে। ইতিপূর্বে গড়ে ওঠা হরপ্পা-সংস্কৃতি অধিক উন্নত হলেও তা ক্ষণস্থায়ী ও স্বল্পবিস্তৃত হবার ফলে সামগ্রিকভাবে বা স্থায়ীভাবে ভারতীয় জনজীবন প্রভাবিত হতে পারেনি। সেই শূন্যতা বা অভাবপুরণ করেছে আর্য সভ্যতা বা বৈদিক সভ্যতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *